Tuesday, November 19, 2019

ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি!


পয়সার গরমতো জীবনে অনেক দেখলেন। কিন্ত বিদ্যার এমন গরম দেখেছেন বা শুনেছেন কখনও? সবটা শুনলে মাথা ঝিমঝিম করবে, হাত পা’ও অবশ হয়ে যেতে পারে বৈকি! এক জীবনে এত পড়াশোনা কোনও রক্ত মাংসের মানুষ করতে পারে, না পড়লে বিশ্বাস হবে না। তাও আবার সেই ভদ্রলোক যদি ভারতীয় হন!

মারাঠি এই ভদ্রলোকের নাম ‘শ্রীকান্ত জিচকার’। পড়াশোনার ক্যারিয়ারটা একবার চোখ বুলিয়ে নিন শুধু, তাহলেই মালুম পড়বে ভদ্রলোক কি কাণ্ডটাই না করেছেন।
১. জীবন শুরু MBBS, M.D দিয়ে।
২. এরপর L.L.B করলেন। সঙ্গে ইন্টারন্যাশানাল ল-এর ওপর স্নাতকোত্তর করলেন।
৩. এরপর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর ওপর ডিপ্লোমা, সঙ্গে M.B.A
৪. এরপর জার্নালিজম নিয়ে স্নাতক।
এতদূর পড়ার পর আপনার যখন মনে হচ্ছে লোকটা পাগল নাকি, তখন আপনাকে বলতেই হচ্ছে এতো সবে কলির সন্ধ্যে। এখনও গোটা রাত বাকি।
এই ভদ্রলোকের শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রীই আছে দশটা বিষয়ের ওপর! স্নাতকোত্তরের বিষয়ের তালিকাটা একবার দেখে নেওয়া যাক:
১. পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
২. সোশিয়লজি
৩. ইকোনমিক্স
৪. সংস্কৃত (ডি.লিট)
৫. হিস্ট্রি
৬. ইংরেজি
৭. ফিলোসফি
৮.পলিটিক্যাল সায়েন্স
৯. এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি, কালচার, এন্ড আর্কিওলজি
১০. সাইকোলজি
উপরের যতগুলো বিষয় দেখছেন সব ক’টিতেই প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে স্নাতকোত্তর, এবং ২৮টি স্বর্ণপদক বিজয়ী। সব মিলিয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতি গ্রীষ্মে ও প্রতি শীতেই উনি কোনও না কোনও স্নাতকোত্তরের বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন।

মাথা ঝিমঝিম করছে তো! তা মাথার আর দোষ কি বলুন! তবে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার আগে একবারটি শুধু শুনে যান। এতসব পড়তে পড়তে ওনার যখন একঘেয়েমি লাগছিল, ঠিক করলেন এবার একটু স্বাদ বদলানো যাক! তো স্বাদ বদলাতে আমি আপনি বেড়াতে যাই, আর উনি “আই.পি.এস (IPS)” পরীক্ষায় বসলেন আর পাশ করলেন। সেটা ১৯৭৮ সাল। কিন্তু পোষালো না চাকরিটা। চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে বসলেন “আই.এ.এস (IAS)” পরীক্ষায়। ১৯৮০-তে “আই.এ.এস(IAS)” হলেন।
নটে গাছটা তাহলে মুড়োলো শেষ অবধি। আজ্ঞে না মুড়োয়নি এখনও। চারমাসের মধ্যে “আই.এ.এস(IAS)” এর চাকরিটাও ছেড়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে লড়বেন বলে। ১৯৮০-তে উনি যখন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন ওনার বয়স সবে ২৫। উনি হলেন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিধায়ক। সবই হল যখন তখন মন্ত্রী হওয়াটাই বা আর বাকি থাকে কেন! সেটাও হলেন এবং একটা দুটো দফতরের নয়, একেবারে ১৪ টা দফতরের। ১৯৯২ সাল নাগাদ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন।

ওনার এই ‘সামান্য’ কয়েকটি গুণ ছাড়াও উনি:
অসাধারণ চিত্রশিল্পী,
পেশাদার ফটোগ্রাফার,
মঞ্চাভিনেতা,
সখের বেতার চালক ও জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও ইউনেস্কোতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ভারতের অন্যতম বিখ্যাত পুরোহিত ছিলেন। অগ্নিহোত্রী গোত্রের ব্রাহ্মণ হিসেবে তিনি তিন ধরণের পবিত্র বৈদিক যজ্ঞ পালন করতেন এবং নিজে হাতে অত্যন্ত কঠিন ‘অগ্নিষ্টোম’ ও ‘বাজপেয় সোমযজ্ঞ’ এর আয়োজন করেন ও ‘দীক্ষিত’ উপাধিতে ভূষিত হন।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৫২০০০ বই রয়েছে ওনার। ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ ওনাকে “ভারতবর্ষের সবথেকে শিক্ষিত ব্যক্তি”র শিরোপা দিয়েছে। ১৯৮৩-তে উনি ‘বিশ্বের অসামান্য দশজন তরুণ’ হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৪ এ পথ দুর্ঘটনায় ওনার মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর।
(সংগৃহীত)

নান্দনিকতা পরশে | Art of Life

No comments:

Post a Comment