Monday, November 25, 2019

সৌন্দর্যের বৈচিত্র্য!


কিছু কিছু মেয়ের সৌন্দর্য ভাতের ফ্যানের বুদবুদ এর মতো উথলে উথলে পড়ে। কিছু মেয়ের সৌন্দর্য মেঘলা আকাশের চাঁদের মতো লুকোচুরি খেলে। কিছু মেয়ের সৌন্দর্য ফুটন্ত কলাফুল এর মতো শান্ত স্নিগ্ধ। কিছু মেয়ের সৌন্দর্য নীল অপরাজিতার মতো শান্ত বাতাসে মৃদু দোলে আর শান্ত বিকেলে তিশির ফুলের সমারোহের মতো আভা ছড়ায়। কিছু মেয়ের সৌন্দর্য তিলের ফুলের মতো শান্ত মায়াবী। কিছু মেয়ের সৌন্দর্য রঙ্গিন প্রজাপতির মতো বিচিত্র নন্দনময়। কিছু মেয়ের সৌন্দর্য রংধনুর মতো দিপ্তিময় রসায়ন-সাহিত্য-মহাকাশতত্ত্ব।
আর কিছু মেয়ের সৌন্দর্য চৈত্রের কড়া রোদ্রের মতো।
কিছু ছেলের সৌন্দর্য বর্ষণমুখর আধার রাতে চালিয়ে যাওয়া বাইকের আলোর মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য কামড় দিয়ে দুইভাগ করা কাঠবাদাম এর মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য কাঠবিড়ালির মিতালির মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য আটলান্টিক মহাসাগরের বরফের মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য এশিয়া মাইনরের লৌহের মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য রাজহংসের মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য ধোঁয়াশার মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য ঘোড়ার খুরে সৃষ্টি হওয়া ধুলিময় পথের মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য চিপুনি দেওয়ার সময় পড়তে থাকা লেবুর রসের মতো। কিছু ছেলের সৌন্দর্য ফুটন্ত বাষ্পময় পানির মতো।

© মেহেদী হাসান
সৌন্দর্যবিজ্ঞানী, লেখক ও গবেষক।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রোগী দেখেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং


সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবার রোগী দেখে সময় কাটান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। অন্য সাধারণ চিকিৎসকদের মতোই এদিন কর্মব্যস্ত থাকেন তিনি।
ডা. লোটে শেরিং পড়ালেখা করেছেন বাংলাদেশের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। তিনি এই কলেজের ২৮তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন।
এখান থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে বাংলাদেশেই জেনারেল সার্জারি বিষয়ে তিনি এফসিপিএসও করেন।
২০১৩ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন লোটে শেরিং। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি রাজনীতিতে ব্যাপক সফলতা লাভ করেন।
ভুটানে গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম দফা নির্বাচনে লোটে শেরিংয়ের রাজনৈতিক দল ডিএনটি জয়লাভ করে।
এরপর তিনি প্রথম দফা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগেকে হারিয়ে দেন। সুখী দেশ হিসেবে খ্যাতি আছে ভুটানের।
এএফপির খবরে জিগমে দর্জি ওয়াংচুক ন্যাশনাল রেফারেল হাসপাতালের শনিবারের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
লোটে এক রোগীর মূত্রনালির অপারেশন করে সবে ফিরলেন। হাসপাতালের সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। আলাদা করে লোটের দিকে কারও নজর নেই।
তিনি যে দেশটির প্রধানমন্ত্রী তা বোঝার কোনো উপায় নেই। অ্যাপ্রোন পরিহিত লোটে হাসপাতালের করিডরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
লোটে বলেন, ছুটির দিনে কেউ গলফ খেলেন, কেউ আরচারি খেলেন। কিন্তু আমি এই দিনটিকে চিকিৎসাসেবার জন্য বেছে নিয়েছি। হাসপাতালে কর্মব্যস্ততার মধ্য দিয়ে আমার মানসিক চাপ কমে।
লোটে চিকিৎসাশাস্ত্রে বাংলাদেশ, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। শনিবার রোগী দেখা ছাড়াও সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সকালে তিনি ইন্টার্ন এবং চিকিৎসকদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আর পরিবারকে সময় দেন প্রতি রোববার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও লোটের চেয়ারের পেছনে একটি অ্যাপ্রোন ঝোলানো আছে। তিনি বলেন, এই অ্যাপ্রোন সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির কথা আমাকে মনে করিয়ে দেয়।
লোটের কাছে রাজনীতি অনেকটা চিকিৎসাসেবার মতো। তার ভাষায়, হাসপাতালে আমি রোগীদের স্ক্যান করি, সেবা দিই। সরকারে আমি রাজনীতির স্বাস্থ্য স্ক্যান করি ও সেটিকে আরও ভালো করার চেষ্টা করি।

নান্দনিকতার পরশে | Art of Life

Tuesday, November 19, 2019

অসাধারণ এক লেখা!


নাগরিক জীবনের চাকা যেভাবে থেমে যায় তা এই লেখা পড়লে জানা যাবে। অসাধারণ নান্দনিক একটি লেখা; কষ্টের গল্পও এতো সুন্দর করে লেখা যায় কী করে?→

সময় যত গড়াচ্ছে রাঙামাটির সবকিছুই যেন ফুরিয়ে আসছে। পাঁচ টাকার একটি মোমবাতি, সেটার জন্য হচ্ছে কাড়াকাড়ি। চালের কেজি ১০০টাকার উপর, আলুর কেজি ১০০টাকা, মরিচের কেজি ৭০০টাকা ছাড়িয়েছে, প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮টাকা। চেরাগে(বাতি) কেরোসিন ভরে সেহেরিতে ঘর রাঙাবে, রাঙামাটিতে এখন কেরোসিনের জন্য চলছে মারামারি। বিদ্যুৎ মঙ্গলবার ভোরে সেই যে গেল আর ফেরেনি। চার্জ দিতে না পারায় সব মোবাইল ফোন বন্ধ। শহরে তেল ফুরিয়েছে, তাই কার্যকর নেই কোনো জেনারেটর। মেঘলা আকাশ- রোদ নেই, সোলার প্যানেলগুলোর অাপাতত অবসর। রিকশাহীন- তেলহীন শহর রাঙামাটিতে তেলচালিত অটোরিকশার চাকা বন্ধ হবে হবে বলছে। রাঙামাটি শহরে প্রবেশের চারটি পথ। সবকটাই মাটিধসের অবরোধ। শহরে পণ্যবাহী গাড়ি ঢোকার কোনো সুযোগ রাখেনি পাষাণ পাহাড়।
শহরজুড়ে পানি সরবরাহ বন্ধ, দোকানে দোকানে মিনারেল পানির মজুদ ফুরিয়েছে। পাহাড়ে সংবাদকর্মীরা এখন অসহায়। নেই ইন্টারনেট। মোবাইলের চার্জ নিভু নিভু। সংবাদ সংগ্রহে এমন দুঃসময় আর আসেনি পাহাড়ের সাংবাদিকদের সামনে। নিত্যপণ্য মিলছে না। আছে চাল-ডালের তীব্র সংকট। নৌপেথ অল্পসল্প যে সব তরকারি আসছে তা আকাশছোয়া দাম। কেরোসিন নেই, মোমবাতি নেই। সন্ধ্যায় রাঙা (সূর্য) আড়াল হলেই মাটির (ভূমিধস) জন্য পুরো রাঙামাটি হয়ে যায় মৃত্যুপূরীর আধাঁর। তখন আরো অসহায় পাহাড়ের মানুষ। সড়কপথ যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে, কেউ বলতে পারছে না রাঙামাটির পথে গাড়ির চাকা ঘুরবে কবে। দুঃখিত, বলতে পারছি না রাঙামাটি স্বাভাবিক হবে কবে!
উৎস: তমাল বড়ুয়া'র পোস্ট থেকে।
তথ্যসূত্র- "সাদা এপ্রোন" ফেসবুক পেজের সুত্র ধরে।

নান্দনিকতায় বিমুগ্ধতায় | Art of Life

ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি!


পয়সার গরমতো জীবনে অনেক দেখলেন। কিন্ত বিদ্যার এমন গরম দেখেছেন বা শুনেছেন কখনও? সবটা শুনলে মাথা ঝিমঝিম করবে, হাত পা’ও অবশ হয়ে যেতে পারে বৈকি! এক জীবনে এত পড়াশোনা কোনও রক্ত মাংসের মানুষ করতে পারে, না পড়লে বিশ্বাস হবে না। তাও আবার সেই ভদ্রলোক যদি ভারতীয় হন!

মারাঠি এই ভদ্রলোকের নাম ‘শ্রীকান্ত জিচকার’। পড়াশোনার ক্যারিয়ারটা একবার চোখ বুলিয়ে নিন শুধু, তাহলেই মালুম পড়বে ভদ্রলোক কি কাণ্ডটাই না করেছেন।
১. জীবন শুরু MBBS, M.D দিয়ে।
২. এরপর L.L.B করলেন। সঙ্গে ইন্টারন্যাশানাল ল-এর ওপর স্নাতকোত্তর করলেন।
৩. এরপর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট এর ওপর ডিপ্লোমা, সঙ্গে M.B.A
৪. এরপর জার্নালিজম নিয়ে স্নাতক।
এতদূর পড়ার পর আপনার যখন মনে হচ্ছে লোকটা পাগল নাকি, তখন আপনাকে বলতেই হচ্ছে এতো সবে কলির সন্ধ্যে। এখনও গোটা রাত বাকি।
এই ভদ্রলোকের শুধু স্নাতকোত্তর ডিগ্রীই আছে দশটা বিষয়ের ওপর! স্নাতকোত্তরের বিষয়ের তালিকাটা একবার দেখে নেওয়া যাক:
১. পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
২. সোশিয়লজি
৩. ইকোনমিক্স
৪. সংস্কৃত (ডি.লিট)
৫. হিস্ট্রি
৬. ইংরেজি
৭. ফিলোসফি
৮.পলিটিক্যাল সায়েন্স
৯. এনসিয়েন্ট ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি, কালচার, এন্ড আর্কিওলজি
১০. সাইকোলজি
উপরের যতগুলো বিষয় দেখছেন সব ক’টিতেই প্রথম শ্রেণীর সঙ্গে স্নাতকোত্তর, এবং ২৮টি স্বর্ণপদক বিজয়ী। সব মিলিয়ে ১৯৭৩ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রতি গ্রীষ্মে ও প্রতি শীতেই উনি কোনও না কোনও স্নাতকোত্তরের বিষয়ের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন।

মাথা ঝিমঝিম করছে তো! তা মাথার আর দোষ কি বলুন! তবে মাথা ঘুরে পড়ে যাবার আগে একবারটি শুধু শুনে যান। এতসব পড়তে পড়তে ওনার যখন একঘেয়েমি লাগছিল, ঠিক করলেন এবার একটু স্বাদ বদলানো যাক! তো স্বাদ বদলাতে আমি আপনি বেড়াতে যাই, আর উনি “আই.পি.এস (IPS)” পরীক্ষায় বসলেন আর পাশ করলেন। সেটা ১৯৭৮ সাল। কিন্তু পোষালো না চাকরিটা। চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে বসলেন “আই.এ.এস (IAS)” পরীক্ষায়। ১৯৮০-তে “আই.এ.এস(IAS)” হলেন।
নটে গাছটা তাহলে মুড়োলো শেষ অবধি। আজ্ঞে না মুড়োয়নি এখনও। চারমাসের মধ্যে “আই.এ.এস(IAS)” এর চাকরিটাও ছেড়ে দিলেন মহারাষ্ট্রের বিধানসভা ভোটে লড়বেন বলে। ১৯৮০-তে উনি যখন বিধায়ক নির্বাচিত হলেন তখন ওনার বয়স সবে ২৫। উনি হলেন ভারতের সবচেয়ে কমবয়সী বিধায়ক। সবই হল যখন তখন মন্ত্রী হওয়াটাই বা আর বাকি থাকে কেন! সেটাও হলেন এবং একটা দুটো দফতরের নয়, একেবারে ১৪ টা দফতরের। ১৯৯২ সাল নাগাদ রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হলেন।

ওনার এই ‘সামান্য’ কয়েকটি গুণ ছাড়াও উনি:
অসাধারণ চিত্রশিল্পী,
পেশাদার ফটোগ্রাফার,
মঞ্চাভিনেতা,
সখের বেতার চালক ও জ্যোতিষশাস্ত্রে বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ও ইউনেস্কোতে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ভারতের অন্যতম বিখ্যাত পুরোহিত ছিলেন। অগ্নিহোত্রী গোত্রের ব্রাহ্মণ হিসেবে তিনি তিন ধরণের পবিত্র বৈদিক যজ্ঞ পালন করতেন এবং নিজে হাতে অত্যন্ত কঠিন ‘অগ্নিষ্টোম’ ও ‘বাজপেয় সোমযজ্ঞ’ এর আয়োজন করেন ও ‘দীক্ষিত’ উপাধিতে ভূষিত হন।
ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৫২০০০ বই রয়েছে ওনার। ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ ওনাকে “ভারতবর্ষের সবথেকে শিক্ষিত ব্যক্তি”র শিরোপা দিয়েছে। ১৯৮৩-তে উনি ‘বিশ্বের অসামান্য দশজন তরুণ’ হিসেবে নির্বাচিত হন।
২০০৪ এ পথ দুর্ঘটনায় ওনার মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর।
(সংগৃহীত)

নান্দনিকতা পরশে | Art of Life

হুমায়ূন আহমেদ ও গুলতেকিনের বিয়ের গল্প


লাইফের কষ্টের ঘটনাগুলোও যে মধুর করে লেখা যায় এবং পাঠক তা পড়লে পাঠকের মনেও মধুরতা ও অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হয় তা হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা পড়লে অনুধাবন করা যায়—

গুলতেকিনকে যেভাবে বিয়ে করেছিলেন হুমায়ূন অাহমেদ
এই জীবনে বেশিরভাগ কাজই আমি করেছি ঝোঁকের মাথায়। ডিগ্রী শেষ করে দেশে ফিরলাম। সাত বছর আমেরিকায় কাটিয়ে যে সম্পদ নিয়ে ফিরলাম তা হল নগদ পঞ্চাশ ডলার, দুই স্যুটকেস ভর্তি বাচ্চাদের পুরানো খেলনা, এক স্যুটকেস বই এবং প্রচুর চকলেট।
আমি যে সব সময় ইমপালস- এর উপরে চলি তা কিন্তু না। কাজে-কর্মে, চিন্তা-ভাবনায় আমি শুধু যে গোছানো তা না, অসম্ভব গোছানো। কখন কী করবো, কতক্ষণ করব তা আগে ভাগে ঠিক করা। কঠিন রুটিন। সময় ভাগ করা তারপরেও হঠাৎ হঠাৎ কেন জানি মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। উদ্ভট একেকটা কাণ্ড করে বসি। কোনো সুস্থ মাথার মানুষ যা কখনো করবে না।
গুলতেকিনের সঙ্গে বিয়ে হয় এমন ঝোঁকের মাথায়। তখন আমি হতদরিদ্র। লেকচারার হিসেবে ইউনিভার্সিটি থেকে সব মিলিয়ে সাত/আটশো টাকা পাই। দুই ভাইবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বাবর রোডের এক বাসায় থাকি। সে বাসা সরকারী বাসা। এভিকেশন নোটিস হয়ে গেছে। ম্যাজিস্ট্রেট নিজে এসে বলে গেছেন বাড়ি ছেড়ে দিতে। পনেরো দিনের নোটিস। বাড়ি না ছাড়লে পুলিশ দিয়ে উঠিয়ে দেয়া হবে। টাকা পয়সার দিক দিয়ে একেবারে নিঃস্ব। মাসের শেষের দিকে বেশির ভাগ সময়ই বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে আসার পয়সাও থাকে না। হেঁটে হেঁটে আমি ক্লাসে যাই। ক্লাস শেষ করে ক্লান্ত হয়ে হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি। নিতান্ত পাগল না হলে এমন অবস্থায় কেউ বিয়ের চিন্তা করে না।
আমার মনে হল গুলতেকিন নামের এই বালিকাটিকে পাশে না পেলে আমার চলবে না। গুলতেকিনের মা-বাবা আমার কাছে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। বড় মেয়েরই বিয়ে হয় নি। ক্লাস টেনে পড়া মেয়ের বিয়ে হবে কি করে? কি করা যায় কিছুই ভেবে পাই না।
একদিন গুলতেকিন ডিপার্টমেন্টে আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে। আমি বললাম, চল এক কাজ করি– আমরা কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
সে চোখ বড় বড় করে বলল, কেন? কোর্টে গিয়ে বিয়ে করব কেন?
— খুব মজা হবে। নতুন ধরনের হবে। ব্যাপারটা খুব নাটকীয় না? তোমাকে ভাবার জন্য তিন মিনিট সময় দিলাম। তুমি ভেবে দেখো, তারপর বলো।
সে ভাবার জন্য তিন মিনিটের মত দীর্ঘ সময় নিলো না। এক মিনিট পরেই বলল, চলুন যাই। কিন্তু আমি তো শাড়ি পরে আসি নি। সালোয়ার-কামিজ পরে কি বিয়ে করা যায়?
কোর্টে শেষ পর্যন্ত যাওয়া হল না। কনের বয়স চৌদ্দ। এই বয়সে বিয়ে হয় না। আমি কোন উপায় না দেখে তাঁর ফুপু খালেদা হাবীবকে একটি দীর্ঘ চিঠি লিখলাম। আমার সাহিত্যপ্রতিভার পুরোটাই ঢেলে দিলাম চিঠিতে। চিঠি পড়ে তিনি বিস্মিত এবং খুব সম্ভব মুগ্ধ। কারণ তিনি গুলতেকিনের পরিবারের সবাইকে ডেকে দৃঢ় গলায় বললেন, এই ছেলের সঙ্গেই গুলতেকিনের বিয়ে দিতে হবে। অন্য কোথাও নয়। ভবিষ্যতে যা হবার হবে।
আমার চিঠির জবাবে তিনি লিখলেন– “আপনার অদ্ভুত চিঠি পেয়েছি। এত বানান ভুল কেন?”
তারা ক্লাস টেনে পড়া মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজী হয়েছেন। এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে বিয়ে হবে। এই খবরে আমার এবং মা’র মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। হাতে একটা পয়সা নেই। যেকোন মুহুর্তে আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেবে। এই অবস্থায় বিয়ে। কে জানে নতুন বউ নিয়ে বাসায় এসে দেখা যাবে পুলিশ দিয়ে সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। নতুন বউ নিয়ে রাস্তায় রাত কাটাতে হবে।
মা তাঁর সর্বশেষ সম্বল বাবার দেয়া হাতের একজোড়া বালা, যা তিনি চরম দুঃসময়েও যক্ষের ধনের মত আগলে রেখেছিলেন, বিক্রি করে বিয়ের বাজার করলেন। জিনিসপত্রগুলি খুব সস্তা ধরনের কিন্তু তাতে মিশে গেল আমার বাবা এবং মা’র ভালোবাসা। আমি জানতাম ভালোবাসার এই কল্যাণময় স্পর্শেই আমার অনিশ্চয়তা, হতাশা কেটে যাবে।
বউ নিয়ে বাসায় ফিরে বড় ধরনের চমক পেলাম। আমার শোবার ঘরটি অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে আমার ছোট বোন। আমাদের কোনো ফ্যান ছিল না। কিন্তু আজ মাথার উপরে ফ্যান ঘুরছে। বিছানায় কি সুন্দর ভেলভেটের চাদর। খাটের পাশে সুন্দর দুটি বেতের চেয়ার। বেতের চেয়ারের পাশে ছোট্ট একটা টেবিলে একগাদা রক্ত গোলাপ। গোলাপের পাশে একটা চিঠিও পেলাম। মেজো বোন শিখুর লেখা চিঠি— “দাদা ভাই, তুমি যে সব গান পছন্দ করতে তার সব ক’টি টেপ করা আছে। কথা বলতে বলতে তোমরা যদি ক্লান্ত হয়ে পড় তাহলে ইচ্ছা করলে গান শুনতে পার। দরজার কাছে একটা ক্যাসেট প্লেয়ার রেখে দিয়েছি"।
ক্যাসেট প্লেয়ার চালু করতেই সুচিত্রা মিত্রের কিন্নর কন্ঠ ভেসে এল – ভালোবেসে যদি সুখ নাহি তবে কেন, তবে কেন মিছে এ ভালোবাসা?
গভীর আবেগে আমার চোখে জল এসে গেল। আমি সেই জল গোপন করবার জন্য জানালা দিয়ে তাকিয়ে বললাম, কেমন লাগছে গুলতেকিন?
সে নিচু গলায় বলল, বুঝতে পারছি না। কেমন যেন স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।
— ‘ঘুম পাচ্ছে?’
— ‘না।’
সারারাত আমরা গান শুনে কাটিয়ে দিলাম দু’জনের কেউই কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। গান শোনা ছাড়া উপায় কি?
পরদিন ভোরবেলা খুব দুঃখজনক ব্যাপার ঘটল। যাদের বাসা থেকে সিলিং ফ্যান ধার করে আনা হয়েছিল তারা ফ্যান খুলে নিয়ে গেলো।
গুলতেকিন বিস্মিত হয়ে বলল, ওরা আমাদের ফ্যান খুলে নিচ্ছে কেন?
আমি মাথা নিচু করে রইলাম। জবাব দিতে পারলাম না। বিছানার চমৎকার চাদর, বেতের চেয়ার, ক্যাসেট প্লেয়ার সবই তারা নিয়ে গেল। এমনকি টেবিলে রাখা সুন্দর ফুলদানিও অদৃশ্য। গুলতেকিন হতভম্ব। সে বলল, এসব কি হচ্ছে বলুন তো? ওরা আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে কেন? আমরা বুঝি রাতে গান শুনব না?
গুলতেকিনের প্রশ্নের জবাব দেবার মত মানসিক অবস্থা তখন আমার নেই। আমার জন্য আরো বড় সমস্যা অপেক্ষা করছে। বাসার সামনে পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে আছে। আজ আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেবে। এই কারনেই সবাই তড়িঘড়ি করে তাদের জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে। ওদের দোষ দিয়ে লাভ নেই।
মা পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলছেন। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে লজ্জায় কাঁপছি। আমার ছোটবোন এসে বলল, দাদাভাই, তুমি ভাবীকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে চলে যাও। এই নোংরা ব্যাপারটা ভাবীর সামনে না হওয়াই ভাল।
আমি গুলতেকিনকে নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। বৈশাখ মাসের ঘন নীল আকাশ, পেঁজাতূলার স্তূপীকৃত মেঘ, চনমনে রোদ। আমরা রিকশা করে যাচ্ছি। হুড ফেলে দিয়েছি। আমার মনের গোপন ইচ্ছা– পৃথিবীর সবাই দেখুক, এই রূপবতী বালিকাটিকে আমি পাশে পেয়েছি। গভীর আনন্দে আমার হৃদয় পূর্ণ। বাসায় এখন কি হচ্ছে তা এখন আমার মাথায় নেই। ভবিষ্যতে কি হবে তা নিয়েও ভাবছি না। বর্তমানটাই সত্যি। অতীত কিছু না। ভবিষ্যৎ তো দূরের ব্যাপার। আমরা বাসকরি বর্তমানে – অতীতেও না, ভবিষ্যতেও না।
— হুমায়ূন অাহমেদ
(সংগৃহীত)

নান্দনিকতার বিমুগ্ধতায় | Art of Life

বিশ্ববিদ্যালয় হলে বিয়ে অনুষ্ঠান!

শিক্ষাঙ্গনে বিয়ে


বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোকে যে মেয়েরা নিজেদের আপন বাসা বানিয়ে নেয় তারই প্রমাণ দিলেন গত পরশু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তাপসী রাবেয়া হলে নিজের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান উদযাপনের মধ্য দিয়ে।
রংপুরের মেয়ে আফরিন আরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদভুক্ত পেইন্টিং ডিপার্টমেন্টের ২০১২-১৩ সেশনের ছাত্রী। ঢাকার ছেলে হাসনাত সৌরভও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের ছাত্র।
দু'জনে ক্যাম্পাসে প্যারিস রোডের অধ্যায় শেষ করলেন সফল ভাবেই। এরপর হাসনাত ভাইয়ের চাকরির খবর আফরিন আপুর কানে পৌঁছে দিতেই, দুই পরিবারের কানে তাদের সম্পর্কের কথা পৌঁছাতে আর সময় লাগেনি। বাকি ফরমালিটিটুকু দুই পরিবারের সদস্যরাই সম্পন্ন করেছেন 😇
পরিবার হতে নভেম্বরে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলেও কনের নিজের ইচ্ছাতেই এতদিনের হল জীবনের বান্ধবীগুলোর (এখন বান্ধবী বললে ভুল হবে, এতদিন একসাথে থাকার পর একেকজন বোনে রুপান্তরিত হয়) সাথে নিজের হলুদ সন্ধ্যা পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে গত পরশু সন্ধ্যায় তাপসী রাবেয়া হলের এই উৎসবমূখর পরিবেশে এতদিন নিজের মেয়ের মতো আগলে রাখা হল প্রভোস্ট ম্যামের হলুদ লাগানোর মধ্য দিয়েই হলুদ সন্ধ্যাটি শুরু হয় প্রযুক্তির এই যুগে দুই পরিবারের সদস্যরা এবং হাসনাত ভাইয়া সার্বক্ষণিক যুক্ত ছিলো ভিডিও কলের মাধ্যমে।
("বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ ও তথ্য সহায়তা কেন্দ্র" গ্রুপ এর October 25 at 7:18 PM তে দেওয়া পোস্ট)


বিলবোর্ডের মাধ্যমে এক মেয়ের অভিনব প্রেম প্রস্তাব!


২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের কথা—
বাংলাদেশে এই প্রথম বানিজ্যিক বিলবোর্ড ভাড়া করে সুবিশাল পরিসরে বিয়ের প্রস্তাবের ঘটনা ঘটলো। আর এক্ষেত্রে অবদান রাখলেন একজন নারী!
প্রেমিকের জন্মদিনে এমন অভিনব কায়দায় প্রস্তাবটি দিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা পারিসা শাকুর, আর এই প্রস্তাব পেয়েছেন তার প্রেমিক সাজেদ রহমান। তিনি তার প্রেমিক সাজেদ রহমানের জন্মদিনে ধানমন্ডির Anam Rangs Plaza এর পাশে অবস্থিত বিলবোর্ডে এই অনন্য কীর্তি করার মাধ্যমে তাকে জানালেন হৃদয়ের কথা।
ভালোবাসা প্রকাশের এই অভূতপূর্ব ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্লগেও ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সবখানেই এই যুগলের স্মরণীয় দিনের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মুগ্ধ পারিসা শাকুরের তার প্রেমিককে ভালোবাসা নিবেদনের এই অনন্য পদ্ধতি দেখে।
সেই বিলবোর্ডে লেখা ছিলো—
On this Birthday Of yours, I want to offer you myself... not for today... but for ALWAYS
Shajed… Will You Marry Me ?
অর্থাৎ, তোমার এই জন্মদিনে, আমি নিজেকে তোমার হাতে তুলে দিতে চাই... শুধু আজকের দিনের জন্য নয়... বরং সারাজীবনের জন্য
সাজেদ... তুমি কি আমাকে বিয়ে করবে?
জানা যায়, রাত ঠিক ১২টায় প্রেমিকের চোখ বেঁধে তাকে সারপ্রাইজ দিতে পারিসা শাকুর নির্দিষ্ট বিলবোর্ডের সামনে নিয়ে যান। অতঃপর বন্ধুদের সহযোগিতায় আতশবাজি, আর হই হুল্লোড়ের মধ্যে উদযাপিত হয় সাজেদের বিশেষ জন্মদিনটি।
বিলবোর্ডে নিজের নাম, আর প্রেমিকার কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে অভিভূত সাজেদ তৎক্ষণাৎ জানান তারও নিজের মনের কথা। তিনিও ঘর বাঁধতে চান পারিসার সাথেই।
এভাবেই, সিনেমার সুন্দর দৃশ্যের মতো মধুর সমাপ্তি ঘটে বাস্তবের এই স্বপ্নময় ঘটনার।
(সংগৃহীত)


নান্দনিকতার বিমুগ্ধতায় | Art of Life